ডি.এন. বিদ্যামন্দির, শিক্ষক দিবস, ৫ই সেপ্টেম্বর ২০১২
ছাত্রছাত্রীদের প্রতি
শুভপদ্ম চাকমা M.A.B.ED (PGT-DNV)
প্রিয় ছাত্রছাত্রী ভাই বোনেরা,
মনে
রেখো -
শুধু
জীবন ধারণের থেকে বেশি কিছু –মানুষের মত বাঁচা ।
স্পর্শের
থেকে বেশি কিছু –অনুভব করা ।
দেখার
থেকে বেশি কিছু –নিরীক্ষণ করা ।
পড়ার
থেকে বেশি কিছু –হৃদয়ঙ্গম করা ।
শোনার
থেকে বেশি কিছু –অনুধাবন করা ।
(Jhn. H. Rhoades)
তুমি যতই পড়বে ততই শিখবে । কিন্তু পড়াশোনার জগতে এইটা কেবল রীতিই । আধুনিককালে শিক্ষার্থীকে হতে হবে সুশিক্ষিত ও নিজেকে নানা জ্ঞানে সমৃদ্ধ করতে হবে । তাই শুধু বই পড়লেই আদর্শ ছাত্র হওয়া যাবে না । একজন আদর্শ ছাত্র হতে হলে নীচের গুন গুলি তোমার থাকা চাই-
১। একজন আদর্শ ছাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে ও ধর্মীয় সুনীতি মেনে চলবে ।সে হবে সদা সতর্ক, সৎ, কর্তব্যপরায়ণ, সক্রিয় ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ।
২। সে হবে সামাজিক ও কঠোর পরিশ্রমী ।
৩। সে দেশ ও দেশবাসীকে ভালবাসবে । সে দেশ প্রবর্তিত সব রকমের আইন কানুন মেনে চলবে ।
৪। সে সক্রিয়ভাবে বিদ্যালয়ের খেলাধুলা ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য সহ-পাঠক্রমিক কাজে অংশগ্রহণ করবে । শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে তার আচরণ হবে মার্জিত এবং সহপাঠীদের সাথেও তাঁর আচরণ হবে মার্জিত ও বন্ধুত্বপূর্ণ ।
৫। সামাজিক কাজে তাঁর আগ্রহ থাকবে ।
৬। একজন আদর্শ ছাত্র কখনো সময়ের অপব্যবহার করবে না ও কর্তব্য অবহেলা করবে না ।
৭। জ্ঞান অর্জনের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করবে । সে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করবে জ্ঞান আহরণের জন্য, কেননা , জ্ঞান হচ্ছে সাফল্যের চাবিকাটি ।
৮। আদর্শ জীবনযাত্রা হবে তাঁর জীবনের লক্ষ্য ।
৯। সে সবচেয়ে বেশি জোর দেবে ভালো চরিত্র গঠনে ।
১০। সে শৃঙ্খলার মধ্যে থেকে জীবন চালিত করবে ও খারাপ দিক গুলি এড়িয়ে চলবে ।
শুধুমাত্র ইতিবাচক চিন্তা করবে । যে সকল ব্যক্তি বা শিক্ষকরা ইতিবাচক চিন্তা করতে প্রেরণা যোগান তাঁদের পরামর্শ গ্রহণ করবে । অন্যের সমালোচনাকে ভয় করবে না । সেগুলিকে ইতিবাচক যুক্তির মাধ্যমে বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখবে, এতে যদি খারাপ কিছু মনে হয় তাহলে সেগুলোকে শোধরাবে । বিরুপ সমালোচনা গ্রহণ করবে না ।
মহানব্যক্তি বা মহাপুরুষদের জীবনী পড়বে, তাঁদের বাণী ও নীতিগুলিকে গ্রহণ করে সেগুলি পালন করবে ।
জীবনে সম্মান অর্জন করার চেষ্ঠা করবে । শিষ্টাচার অভ্যাস করতে হবে, কারণ শিষ্টাচার অভ্যাসের দ্বারা সম্মান অর্জন করা যায় । মা বাবা শিক্ষক শিক্ষিকাদের গভীরভাবে ভক্তি ও শ্রদ্ধা করবে সঙ্গে সকল অংশের বয়ঃজোষ্ঠ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করবে । বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ভালোবাসা পাবার চেষ্ঠা করবে এবং ভালো শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলবে কারণ * A good teacher is like a candle - it consumes itself
to light the way for others. কাউকে মর্যাদা হানিকর কথা বলবে না। কেউ ভালো কাজ করলে তাঁর প্রশংসা করো । পর নিন্দা করো না । কেউ খারাপ কাজ করলেও তাকে প্রকাশ্যে নিন্দা করো না ।
অপরকে সৎ উপদেশ দেওয়াটা একটা মুল্যবান বিষয় । সৎ কাজে মানুষকে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করো । কাউকে অসৎ কাজে সহযোগিতা ও উৎসাহিত করো না । অন্যকে উপকার করবে, যদি অন্যকে উপকার নাইবা করতে পারলে কিন্ত ক্ষতি করো না । কখনো উত্তেজিত হয়ো না । সুসময় ও দুঃসময়ে মাথা ঠাণ্ডা রেখো ও ধৈর্যশীল হও ।
মা
বাবার সাথে অভিমান করো না তাঁদের আঘাত দিও না , জেদ ধরো না, মা বাবা যদি ভুলও করে থাকে তাঁদের ভালো
করে বুঝানোর দ্বায়িত্ব তোমার । মনে রেখো মা বাবা তোমার জন্য যা করেছে পৃথিবীতে আর
কেউ এমন কাজ করেনি । জীবনকে কখনো সিরিয়াসলি নেবে না । কারণ শুধু আনন্দই জীবন নয়, বিষাদও জীবন, সাফল্যই শুধু জীবন নয় ব্যর্থতাও জীবন, স্বাস্থ্যই শুধু জীবন নয়, রোগও জীবন। জীবনে জয়কে যেমন সাদরে গ্রহণ করবে তেমনি পরাজয়কেও সাদরে গ্রহণ করবে । জীবনের অবশ্যম্ভাবী বিষয়কে হাল্কাভাবে গ্রহণ করো । হতাশ হবে না, হতাশা একটি রোগ । সহনশীল হও কারণ অসহিঞ্চুতাই হতাশার উৎস । জীবনের কোন বড় ধরণের সিদ্ধান্ত নিতে অভিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের পরামর্শ গ্রহণ করবে ।
সময়ের
অপব্যবহার করবে না কারণ হারানো সময়কে কখনো ফিরে পাওয়া যায় না । নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করে পড়বে, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাবে ও ভোরে উঠবে
। রাত্রে ৬/৭ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার । সুস্থ থাকলে দিনে কখনো ঘুমোবে না । সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করা যেতে পারে । নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করো । অতীতে রেজাল্ট ভালো হয়নি বলে আগামী রেজাল্ট ভালো যে হবে না এমন চিন্তা মাথায় আনবে না । বহু ছাত্র অতীতে রেজাল্ট ভালো না হয়েও পরবর্তীতে ভালো রেজাল্ট করেছে এবং বহু ভালো জীবন তৈরি করতে পেরেছে ।
অতীতের সমস্ত বেদনাদায়ক ও পরিতাপের ঘটনাগুলোকে মনের স্মৃতি থেকে মুচে ফেলো, কারণ সেগুলো তোমাকে বারেবারে আঘাত দেবে । অতীতের সমস্ত আনন্দদায়ক ও সুখের স্মৃতি গুলোকে স্মরণে রেখো । কারণ সেগুলোকে স্মরণ করলে তুমি আনন্দ পাবে ।
আত্মবিশ্বাস গড়ে তোল । নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রন রেখো । ঈশ্বরে বিশ্বাস রেখো, তবে কুসংস্কার মুক্ত থেকো । নিজেকে কখনো দুর্বল ভেবো না । সঞ্চয়ের অভ্যাস অবশ্যই করবে,সম্ভব হলে পরিবারে নতুন সম্পদ সৃষ্টি করবে । তবে জীবনে যা পেয়েছ তা নিয়ে খুশী থাকতে চেষ্ঠা করো, কারণ জীবনে চাওয়া পাওয়ার কোন শেষ নেই ।তোমরা
ভালো থেকো এই আশীর্বাদ জানিয়ে আজ এখানেই ইতি ।